কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেরই অনেক মন্তব্য। তবে এর যেমন উপকারিতা আছে তেমনি রয়েছে এর কিছু অপকারিতাও। প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয় তাও প্রশ্নের বিষয়। তবে কালোজিরার ক্ষতির থেকে উপকারিতার পরিমাণই বেশি।
আর আমি আমার এই আর্টিকেলে চেষ্টা করব কালোজিরা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করতে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো...
ভূমিকা
কালোজিরা উপাদানটি কিন্তু খুবই পুষ্টি গুনাগুণ সমৃদ্ধ একটা উপাদান। তবে অনেকেই এটার সম্পর্কে অবগত নয়। কীভাবে খেলে এর উপকারিতা বেশি পাওয়া যায় আবার বেশি খেলে কি ক্ষতি হয়। সেগুলোও অনেকেরই অজানা। তাই আমাদের সকলেরই জানা উচিত কালোজিরা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সমূহ।
কালোজিরা খেলে কি হয়
কালোজিরা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কালোজিরা শাম ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ এখানে সাম অর্থ হল মৃত্যু। (সহিহ বুখারী হাদিস নাম্বার ৫৬৮৮)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত কথার দ্বারা আমরা এটা বুঝতে পারি যে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া কালোজিরা প্রত্যেকটি রোগ নিরাময় করে থাকে। অতএব আপনি আপনার যেকোনো অসুস্থতার সময় সুস্থতার নিয়ামক হিসেবে কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন।
কালোজিরা খেলে কি গ্যাস হয়
কালোজিরা খেলে গ্যাস হয় না বরং বদহজম এবং গ্যাস্টিকের সমস্যার সমাধানের জন্য কালোজিরা খুবই কার্যকর। তবে সেটা খেতে হবে সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে। যেহেতু বদহজম এই সময়ের একটি কমন সমস্যা। বিশেষ করে এই সমস্যাটা হয়ে থাকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাসের কারণে , অন্যদিকে ডায়াবেটিস রোগীদের বদহজম তো এক প্রধান সমস্যা সেহেতু আপনি যদি কোন ঔষধ ছাড়াই আপনার বদহজমের সমস্যা দূর করতে চান?
তাহলে আপনাকে প্রথমে এক থেকে দুই চা চামচ কালোজিরা ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপরে সেটা ভালোভাবে বেটে এক গ্লাস পানির সঙ্গে গুলিয়ে খেতে হবে। প্রত্যহ দুই থেকে তিনবার এই নিয়মে আপনি যদি কালোজিরা লাগাতার এক মাস খেতে পারেন ইনশাআল্লাহ আপনার বদহজম দূর হবে এবং হজম শক্তি ও বৃদ্ধি পাবে।
গ্যাস্ট্রিকের মত অস্বস্তিকর এই সমস্যা থেকে সমাধান পেতে কালোজিরা প্রতিষেধক হিসেবে অনেক ভালো কাজ করে থাকে। আমরা অনেকেই এরকম রয়েছি যারা ভাজাপোড়া খেতে অনেক ভালোবাসি। আবার অনেকেই খাবার খেতে অনিয়ম করে, সকালে দেরি করে খায়, দুপুরে খাবার খেতে খেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আবার অন্যদিকে এমনও মানুষ আছে যারা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার ভালোবাসেন।
এই সমস্ত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস এবং অনিয়ম মাফিক খাদ্য গ্রহণের কারণে গ্যাস্ট্রিক আমাদের লেগেই থাকে। অতএব আপনি যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন, তাহলে নিয়মিত কালোজিরা খান। কেননা গ্যাস্ট্রিকের মতো এই অস্বস্তিকর সমস্যা থেকে কালোজিরা আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। যদি আপনি প্রতিদিন দুধ এবং কালোজিরা উভয়ের সংমিশ্রণে এক চা চামচ করে দুই থেকে তিনবার খেতে পারেন।
তাহলে আপনার জন্য গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে রেহাই পেতে অনেক ভালো ফল দিবে। এছাড়াও কালোজিরা তেল এবং মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খেলেও আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে ইনশাআল্লাহ। তবে আপনাকে খেতে হবে অন্তত দুই থেকে তিন সপ্তাহের মত।
প্রতিদিন কালোজিরা খেলে কি ক্ষতি হয়
কথায় আছে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না ঠিক তেমনি দীর্ঘদিন কালোজিরা খাওয়ার ফলে কিছু অপকারিতা দেখা দিতে পারে। যেমন বিশেষ করে যারা নিয়ম করে তিন মাসের অধিক সময় ধরে কালোজিরা খেয়ে যাচ্ছেন, তাদের ক্ষেত্রে বুক জ্বালাপোড়া এবং বমি বমি ভাব হতে পারে। এছাড়াও গর্ভবতী মায়েদের অকাল গর্ভপাতের সম্মুখীন হওয়া লাগতে পারে অতএব দীর্ঘ সময় ধরে কালোজিরা না খাওয়াই আপনার জন্য ভালো হবে
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম বলতে গেলে সঠিক তেমন কোন নিয়ম নেই। তবে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুসারে যে কোন ভাবে খেতে পারেন। ক্ষেত্র বিশেষে এভাবে খাওয়া যেতে পারে-যেমন
- অসুস্থতার সময় কালোজিরা চিবিয়ে অথবা পিষে গুঁড়ো করে খেতে পারেন
- কালোজিরার ভর্তা ছোট্ট শিশুদের মায়েদের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার
- এলার্জির সমস্যা যাদের রয়েছে তারা যদি প্রত্যহ রাতে কালো জিরার গুঁড়ো এবং পেয়ারা পাতার রস একত্রে মিশ্রণ করে খেতে পারেন তাহলে খুব দ্রুত আপনার এলার্জির সমস্যা দূর হবে
- তাছাড়া যৌবন শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিরাতে কয়েকটা কালোজিরা এবং এক টুকরো পেঁয়াজ খেতে পারেন।
- এছাড়াও খাবার সুস্বাদু করতে অর্থাৎ খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য কালোজিরা আপনি ব্যবহার করতে পারেন
কালোজিরা ও মেথির উপকারিতা
নারকেল তেল, কালোজিরা এবং মেথি এই তিনটি উপাদানের মিশ্রণের ব্যবহারে চুল পড়া রোধ করতে অনেক সাহায্য করে। প্রথমে কালোজিরা এবং মেথি রোদে শুকিয়ে নিয়ে গুঁড়ো করে নিন। এরপরে নারিকেল তেলের সাথে কালোজিরা এবং মেথির গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে কয়েক মিনিট গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। ফুটানো শেষ হলে যখন ঠান্ডা হবে তখন একটি কাঁচের বোতলে রেখে দিন।
এভাবে সংরক্ষণ করার ফলে এটি অন্তত ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে । তারপরে আপনি এই তেল সপ্তাহে ২-৩ দিন বা একদিন পর পর ব্যবহার করুন । ইনশাআল্লাহ আপনি দুই তিন মাসের মধ্যে ফলাফল পাবেন।
কালোজিরা তেলের উপকারিতা কি
কালোজিরার তেল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে, হৃদরোগজনিত সমস্যার আশংকা কমাতে, ত্বকের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং মাংসপেশির ব্যাথা কমাতে কালোজিরার তেল বেশ উপযোগী। পেটের যাবতীয় সমস্যা দূর করা সহ কালোজিরার তেল আমাদের শরীরের কৃমি দমন করতে কাজ করে । এছাড়াও কালোজিরার তেল আরও অনেক ভাবে আমাদের উপকৃত করে থাকে।
কালোজিরার তেল চুলের জন্য
কালোজিরার তেল চুল পড়া রোধ করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে । অলিভ ওয়েলের সাথে কালোজিরার তেল একসাথে মিশিয়ে হাল্কা গরম করে চুলের গোড়ায় ভালভাবে ১০ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপরে ঘণ্টাখানিক পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। ইনশাআল্লাহ আপনি ভাল ফলাফল পাবেন।
লেখকের মন্তব্য
যেহেতু রাসূল সা. বলেছেন যে কালোজিরা এক মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ সেহেতু আপনি বিভিন্ন অসুস্থতায় কালোজিরা সেবন করবেন।। আর আমি চেষ্টা করেছি এই আর্টিকেলটিতে কালোজিরার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতে। আশা করছি এগুলা থেকে উপকৃত হবেন।
লার্ন প্রিয়র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url