মোবাইল ফোন আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায় বিস্তারিত জানুন।

মোবাইল ফোন আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায়, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আসক্তি তাদের মেধা বিকাশে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নষ্ট হওয়ার পেছনে সব থেকে বেশি দায়ী যে বিষয়টি সেটা হচ্ছে মোবাইল ফোন আসক্তি। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিশুদেরও এখন মেধাবিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মোবাইল ফোন আসক্তি।

মোবাইল ফোন আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায় বিস্তারিত জানুন।

মোবাইল ফোন আসক্তি কিভাবে একজন শিক্ষার্থী ও একটি শিশুর মেধাবিকাশের অন্তরায় আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমি আপনাদের সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো এবং এই আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া সম্ভব সেই সম্পর্কেও অবগত করব। 

ভূমিকা

বর্তমানে প্রযুক্তি আমাদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজতর করে তুলেছে' - এতে কোন সন্দেহ নেই , একই সাথে এও বলতে হচ্ছে যে, এই প্রযুক্তির মুখে লাগাম থাকতে হবে। সে লাগাম হচ্ছে আত্ম সংযম , শারীরিক ও মানসিক সচেতনতা এবং পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থার নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু আমাদের সমাজে এই জিনিসের বড্ড অভাব। প্রযুক্তির সাথে প্রথম প্রণয়ের ঘোর এখনো কাটেনি - তা যেন কাটতে চাই না।

ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। আরও ক্ষতি হওয়ার আগে এই অশুভ ঘোর আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে, বের হতে হবে আমাদের এই কল্পিত কারাবাস থেকে।

শিশুদের মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল ফোন আসক্তি

 মেধাবিকাশের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য এই আসক্তির কারণে শিশুরা তাদের পড়াশোনার ব্যাপারে অমনোযোগী হয়ে থাকে এবং শিশুরা সময় মতো খেতেও চাই না এর ফলে অপুষ্টিতে ভুগবে। এছাড়াও শিশুদের নিজের থেকে চিন্তাভাবনা করার যে একটা প্রবণতা সেটা তারা হারিয়ে ফেলছে এই মোবাইল ফোন আসক্তির কারণে।

পড়াশোনায় অমনোযোগী হওয়ার পাশাপাশি শিশুদের ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি খারাপ হয়ে পড়বে , ঘাড়ে ব্যথা অনুভূত হবে। একদিকে যেমন জেদি এবং অতি চঞ্চল হয়ে উঠবে উপর দিকে ইন্টারনেট গেমের প্রতি আসক্তি পেয়ে বসলে তার আচরণ পরিবর্তিত হয়ে যাবে এবং অল্পতেই রেগে যাবে কখনো কখনো নিজের মধ্যে আত্মহত্যা করার প্রবণতা বা অপরকে আঘাত বা হত্যা করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর উপায়


শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর উপায় হিসেবে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি তন্মধ্যে বিকল্প কোন কিছু দেওয়া অর্থাৎ ভালো-মন্দ পার্থক্য করার আগ পর্যন্ত শিশুদের স্মার্টফোন হাতে না দেওয়া বরঞ্চ তাকে খেলাধুলা করতে উৎসাহ করা। শিশুরা সাধারণত অনুকরণ প্রিয় হয় সেজন্য তারা বড়দের হাতে মোবাইল ফোন দেখলে সেও মোবাইল ফোন নিতে আগ্রহ পোষণ করে।

এক্ষেত্রে শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর উপায় হিসেবে আপনি আমি যে কাজগুলো করতে পারি সেটি হচ্ছে তাদের সামনে মোবাইল ফোনে চ্যাট না করা, গান না শোনা, গেম না খেলে ইউটিউবে ভিডিও না দেখা ইত্যাদি এগুলা এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলা থেকে এড়িয়ে চলে শিশুদের মোবাইল ফোন হাতে না দিয়ে বরঞ্চ তাদের মেধা বিকাশে সময় দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন আসক্তি

মোবাইল ফোন আসক্তি পড়াশোনার ক্ষতি অর্থাৎ একদিকে যেমন কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী শিক্ষাক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে আবার অন্যদিকে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়াশোনা নষ্ট করছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় স্কুলের একজন প্রথম সারির শিক্ষার্থীর কথা।

হঠাৎ করে যে কিনা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে ওঠে এমন কি সে বার্ষিক পরীক্ষায় সম্পূর্ণ খাতা ফাঁকা রেখে জমা দেয়। তার এই অবনতির কথা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর হিসেবে পাওয়া যায় সে সম্পূর্ণরূপে মোবাইল ফোনে আসক্ত।

একটি বিখ্যাত উক্তিতে বলা হয়েছে যে 'বই হচ্ছে মস্তিষ্কের সন্তান' তবে গত প্রায় দেড় থেকে দুই বছরে ছাত্র-ছাত্রীদের মস্তিষ্ক থেকে মুছতে বসেছে বইয়ের স্মৃতি, এর কারণ মোবাইল ফোনে আসক্তি।

মোবাইল ফোন আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায়

মোবাইল ফোন আসক্তি মেধা বিকাশের অন্তরায়, কারণ যে বয়সে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করার কথা , খেলাধুলা করার কথা কিন্তু সেই বয়সে মাত্রা অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ছেলেমেয়েদের কল্পনা শক্তি যার ফলে মেধা বিকাশে তারা থমকে যাচ্ছে।

কথায় আছে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা সেজন্য বেড়ে যাচ্ছে অপরাধ প্রবণতা কারণ মোবাইল ফোনে যা দেখছে যা করছে ঠিক তেমনি বাস্তবেও তারা এমনটি করতে চাচ্ছে বা করছে। আর এমনটি করার ফলে তারা তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে এবং জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজে। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে একটি পরিবার এবং একটি সমাজ।

মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর উপায়

যেকোনো আসক্তিই সাধারণত একটু একটু করে একজন মানুষকে গ্রাস করে নেয়। হঠাৎ ঘায়েল করে না, আবার হঠাৎ করে চলেও যায় না। এই আসক্তি অল্প সময়ে দূর হয়ে যাবে এমনটা ভাবা ভুল। চেষ্টাটা ধারাবাহিকভাবে করতে হবে। বিরতিহীন চেষ্টা চললে আর আসক্তিটা ধীরে ধীরে হলেও দূর হবে।

একবারে হবে না, ২-৪ বারেও হবে না। তবে হবে। এটা সম্ভব। যারা নিরলস চেষ্টা করেছে তারা সফল হয়েছে। অতএব মোবাইল ফোন আসক্তি কমানোর উপায় হিসেবে আমরা উক্ত বিষয়গুলো মেনে চলতে পারি।

ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়

ইন্টারনেটের এই ভয়াবহ আসক্তি থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া সম্ভব চলুন তাহলে সেগুলো জেনে আসি।
যেমন:-
  • শুরুতেই লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করা।
  • অফলাইনে ব্যস্ততা বাড়ানো।
  • ডিভাইস থেকে দূরে থাকা।
  • অল্প পরিমাণ ইন্টারনেট কেনা।
  • স্লো ইন্টারনেট ব্যবহার করা।
  • একান্ত দরকার না হলে ইমেজ অফ করে ব্রাউজার চালানো।
  • রাতে ফোন পাশে না রাখা।
  • জিকির - তেলাওয়াতের মাধ্যমে অন্তরকে শীতল রাখার চেষ্টা করা।
  • আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
  • সকালে-বিকেলে ঘুরতে বের হওয়া।
  • সময়মতো ঘুমানো, পর্যাপ্ত ঘুমানো।

দিনে কত ঘন্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত?

এক গবেষণা থেকে পাওয়া যে মানুষের একদিনে সর্বোচ্চ তিন ঘন্টা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা উচিত (প্রয়োজনে এর বেশি ব্যবহার করা যেতে পারে)। এতে করে উক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর চোখ বা স্বাস্থ্যের তেমন একটা ক্ষতি হয় না বলে তারা জানিয়েছেন।

লেখকের মন্তব্য

একান্ত প্রয়োজন ছাড়া স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহার না করা - এটাই আমার এই আর্টিকেল এর মূল ম্যাসেজ। গভীরভাবে চিন্তা করে বের করতে হবে, বাস্তবেই কি এসব আমার জন্য জরুরী? নাকি এটা প্রয়োজনের ওয়াসওয়াসা? আর জরুরি হলেও সেটা আসলে কতটুকু? পরিমাপ করাটা খুবই জরুরী। এটা কি এমন কিছু যা না হলেই না?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

লার্ন প্রিয়র নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url